পবিত্র মক্কা মদিনার দিনগুলি (পর্ব ১)

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ মুজিবুল হক ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:৪২:০১ দুপুর

১৬ই অক্টোবর ২০১২ মঙ্গলবার আমাদের বাড়ীতে কাছে দূরের আত্মীয় স্বজন, পাড়া পড়শী, বন্ধুবান্ধব ছাড়াও নানা ধরনের মানুষের উপস্হিতিতে সরগরম. উপলক্ষ্য আমার মা আজ রাতে পবিত্র হজ্ব করার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হতে জেদ্দা রওয়ানা হবেন মায়ের সাথে সহযাত্রী হয়ে আমিই হজ্বে যাচ্ছি. পবিত্র ইসলাম ধর্মের পূণ্যভূমি আল্লাহর রাসুলের জন্মস্হান এবং পবিত্র মক্কার কাবা ঘর মসজিদুল হারাম হাজরে আসওয়াদ আবে জমজম সাফা মারওয়া মিনা আরাফাত মুজদালিফার বর্ণনা শুনেছিলাম আমার বাবার কাছে, আমার বাবা ১৯৭৯ সালে হজ্ব করেন আর পবিত্র মদিনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বাবাতো আবেগে চোখের পানি ছেড়ে দিতেন তখন থেকেই মহান আল্লাহর কাছে নিরন্তর আবেদন করেছি মায়ের সাথে যেন একটি বার হজ্ব পালন করতে পারি. আমার আয় রোজগারের এমন করুন দশাযে চট্টগ্রাম থেকে বিমানে জেদ্দা তো দূরের কথা পার্শ্ববর্তী জেলায় আসা যাওয়ার বাস ভাড়া যোগানোও কঠিন ব্যাপার. যৌথ পরিবারে আছি বিধায় আমার অন্য তিন ভাই ও দুই বোনের কাছে আমি অত্যন্ত সম্মানিত . তারা সবাই আমার ছোট. আমার বড় ভাই মারা যান ২০০১ সালে আর বাবা মারা যান ২০০২ সালে...

২০১০ সালে আমার মা হজ্ব পালনের ইচ্ছা প্রকাশ করলে ভাই বোনেরা মিলে সিদ্ধান্ত নেয় যে ২০১১ সালে মাকে হজ্ব পাঠাবে. তবে ঐ বছর সময় স্বল্পতার কারনে যাওয়া সম্ভব হয়নি বিধায় ২০১২ সালে হজ্বে যাওয়া প্রস্তুতি নেয়া হয়. মায়ের সঙ্গে যাব আমি... তাদেরকে আমি বলিযে যেহেতু সবাই মিলে মাকে হজ্ব করতে পাঠাচ্ছে সেহেতু আমার ছোট ভাইদের যে কেউ একজন মায়ের সাথে যাওয়া উচিৎ আর আর্থিক দৈন্যতার কারনে আমার উপর হজ্ব ফরজ না এটা বলার পর তারা সবাই এক বাক্যে বলে উঠে বড় ভাই বেচেঁ থাকলে তাকেই যেতে হতো যেহেতু আমি এখন বড় তাই আমাকেই যেতে হবে আমিও বিনা বাক্যে এই মহা পূণ্যের দায়িত্ব নিয়ে মহান আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া আদায় করলাম এই বলে হে আল্লাহ আমার মত অধমকে যারা এই বিপুল সম্মানের মাধ্যমে হজ্বে পাঠাচ্ছে তাদেরও মহা সম্মানের সহিত অতি দ্রুত সপরিবারে হজ্ব নসীব কর..

মদিনা ইন্টারন্যাশনাল হজ্ব কাফেলা নামক একটি কাফেলার মাধ্যমে আমরা হজ্বে যাচ্ছি আমাদের গ্রুপে হজ্বযাত্রীর সংখ্যা ১২৯ জন. স্ত্রী ১০বছর বয়সী একমাত্র কন্যা ভাই বোন ভাতৃ বধূ এবং ভাই বোনের পুত্র কন্যা ও আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাত ১০টায় বিমান বন্দরের উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলাম....

যদিও বিদায় জানানোর জন্য ভাইয়েরা ও বাচ্চারা বিমান বন্দরে এসেছিল. সবার কাছ থেকে অশ্রুসজল শেষ বিদায় নিয়ে যখন বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে প্রবেশ করি তখন ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা আর ক্যালেন্ডারে ১৭ই অক্টোবর. আমাদের প্রবেশের সাথে সাথেই সৌদি মোবিলি টেলিকমের দুইটি সিম আমাদের দেয়া হয় বলা হয়েছে প্রতিটি সিমে ১০ রিরাল রিচার্জ করা আছে. অতপর সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে বিমান বন্দরের লাউন্জে অপেক্ষা করতে থাকি এক সময় গ্রুপ লিডারের নির্দেশে বহুল প্রতীক্ষীত এহরাম পরিধান করে "লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক" তকবীরে বিমানে আরোহন করি. যথা সময়ে অর্থাৎ রাত ২ : ৩০ টায় নির্ধারিত সময়ে ৩১৪ জন হজ্ব যাত্রী নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি জেদ্দার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ত্যাগ করে.

কিং আবদুল আজিজ বিমান বন্দর (জেদ্দা বিমান বন্দর) দীর্ঘ সাড়ে ছয় ঘন্টা ভ্রমনের পর আমাদের বিমান যখন জেদ্দা বিমান বন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করে তখন সূর্য উঠি উঠি অবস্হা স্হানীয় সময় তখন ভোর ৬টা.

কিং আবদুল আজিজ বিমান বন্দর (জেদ্দা বিমান বন্দর) বিমান থেকে নামার সময় দেখলাম পূর্ব দিগন্তে গোলাকার টকটকে লাল রং ধারণ করে সূর্য উঠছে বুকের ভিতর যেন কান্না উঠল ঐ দিগন্তেই তো আমাদের দেশ. বিমান থেকে নেমে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করলাম

কিং আবদুল আজিজ বিমান বন্দর (জেদ্দা বিমান বন্দর) হজ্ব টার্মিনাল অতঃপর সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে যখন বাইরে আসলাম তখন সময় সকাল সাড়ে ৮টা. হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বসার পর আমার এবং মায়ের মোবাইল ফোন অন করলাম

বিমান বন্দর হজ্ব অভ্যর্থনা কেন্দ্র

এই নাম্বার দুটি বিমানে উঠার আগেই ভাই বোনদের দেয়া হয়েছিল খুব সম্ভবত মিসড কল এলার্ট ছিল আমার ভাই নিজামের মিসড কল দেখেই তাকে ফোন করে সুষ্ঠ ভাবে পৌঁছানোর কথা বললাম এক মিনিট কথা বলার পর ব্যালেন্স দেখে আমার মাথার চুল খাড়া হয়ে গেল মাত্র ১ মিনিট কথা বলেই ৫ রিয়াল ৫৫ হালালাহ খরছ হয়ে গেল ? ভাল করে সিম কার্ডের প্যাকেটটি দেখলাম বলা হয়েছিল ১০ রিয়াল আছে সিম কার্ডের প্যাকেটে লেখা আছে ৫ রিয়াল আছে অর্থাৎ প্রতি মিনিট কথা বললে খরছ হবে ৫৫ হালালাহ. কিছুক্ষণের মধ্যে বাস এসে গেল "দাল্লাহ ট্রান্সপোর্ট" এর বাস.

বাব আল মক্কা (মক্কা গেট) গাড়ী চলতে শুরু করলো আমাদের গন্তব্য এবার সরাসরি মক্কা বুকটা দুরু দুরু করছে এর মধ্যে সৌদি আরবে কর্মরত আমাদের আত্মীয়দের ফোন করা শুরু করি কি অবাক কান্ড যাকেই ফোন করি পরিচয় জানার সাথে সাথেই লাইন কেটে দিয়ে তারাই ফোন করছে কিছুক্ষণ পর দেখলাম আমাদের মা ছেলের দুটি মোবাইলে ১০০০ রিয়ালের উপর রিচার্জ করে দেয়া হয়েছে আমরা যতদিন সৌদি আরব ছিলাম ততদিন নিজ টাকায় রিচার্জ করতে হয়নি এমনকি সব ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা ছিল চিরদিন মনে রাখার মত এক্ষেত্রে ফরিদ ভাই মামাত ভাই আমিন, নুরুল হক, কুতুব, পপি, শানু, মালেক, ওমর ও মাসুদের নাম উল্লেখ না করলেই নয়. গাড়ী খুব সম্ভবত ৮০ কিংবা ১০০ কিলোমিটার বেগে চলছে. জেদ্দা শহরকে পাশ কাটিয়ে উচু উচু বিশাল পাহাড় কেটে তৈরি করা এক্সপ্রেসওয়ে বেয়ে গাড়ী চলছে

বাব আল মক্কা (মক্কা গেট) দীর্ঘ ভ্রমনে মায়ের চোখমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট পর পর তিনটি চেক পোস্টে গড়ে ২০ মিনিট করে থামার পর এক সুনসান জায়গায় গাড়ী থামল পবিত্র মক্কা নগরী বোধহয় এখনো অনেক দূরে গাড়ী নামার পর হঠাৎ একটু দূরে দৃষ্টি পড়তেই বুঝে গেলাম আমরা পবিত্র মক্কা নগরীতে পৌঁছে গেছি কারন মক্কার ক্লক টাওয়ারটি এত কাছে দেখাচ্ছিল মনে হচ্ছিল দুই মিনিট হাটলেই পৌঁছে যাব মক্কার এই ক্লক টাওয়ারটি আমি প্রথম দেখি ইন্টারনেটে তাই মোটামুটি ধারনা ছিল তবে ঘড়িটা যে এত বড় হবে তা কল্পনায় ছিলনা.

জমজম ক্লক টাওয়ার দূর হতেও এরূপ দৃশ্যমান হয় আমাদের গাড়ী যেখানে থেমেছিল সেই স্হানের নাম আজিজিয়া. সম্ভবত এখান থেকে আল মসজিদ আল হারামের দূরত্ব কমপক্ষে ১০ কিলোমিটার একটি বিষয় মাথায় আসছিল না আমাদের গাড়ী এত দ্রুত চলেনি উপরন্তু পথিমধ্যে দেড় ঘন্টার মত থেমেছে এর পরেও এত দ্রুত কিভাবে পৌঁছলাম ?

বিষয়: বিবিধ

১৪৩৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

342847
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১৩
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনি ভাগ্যবান৷ ভাল থাকেন৷
342851
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৭
মোহাম্মদ মুজিবুল হক লিখেছেন : Alhamdulillah
342882
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১২:০৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো চলতে থাকুক আপনার অভিজ্ঞতা।
343038
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০২:১১
মোহাম্মদ মুজিবুল হক লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ. দোয়া করবেন.
345853
১৫ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১০:৫৫
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ভালো লাগছে। সব ক’টি পর্ব পড়ার ইচ্ছে আছে।

একটু সমালোচনা ছিল, প্রথম পর্বেই তা করা উচিৎ মনে করছিনা!
১৬ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০২:২০
286997
মোহাম্মদ মুজিবুল হক লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম . আপনার তুলনায় আমি একেবারে বাচ্চা লেখক... আমি একজন স্বল্প শিক্ষিত নবীন লেখক. আপনাদের সমালোচনা আমার ভুল ভ্রান্তি শোধরাতে সহায়ক হবে. আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File